কখন এবং কোন মামলায় সহায়তা পাবেন?

কখন এবং কোন মামলায় সহায়তা পাবেন?

দেওয়ানি প্রকৃতির মোকদ্দমা যেমন- ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিষ্ঠানের, বা ব্যক্তির সাথে প্রতিষ্ঠানের বিরোধ মিমাংসাকারী আইন ও মামলা। যার নিস্পত্তি হয় সাধারণত ক্ষতিপূরন আদায়ের মাধ্যমে অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, বা বেকেসুর খালাশ করে।

ফৌজদারী মামলাসমূহ যেমন- অপরাধ দমনকারী আইন ও মামলা যার নিস্পত্তি হয় উপোযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে বা বেকেসুর খালাশ হয়।

পারিবারিক মামলাসমূহঃ পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর বিধান মতে যে মামলা গুলো পারিবারিক আদালতে দায়ের করতে হয়, যেমনঃ-

(ক) বিবাহবিচ্ছেদ,

(খ) দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার,

(গ) মোহরানা,

(ঘ) ভরণপোষণ ও

(ঙ) সন্তান-সন্তানাদিগনের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধান

 

 উচ্চ আদালতে আপীল অথবা রিভিশন মামলা সমূহের জন্য সরকারি আইনি সহায়তা পাওয় যায়।

মামলা দায়েরের পূর্বে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে যে কোনো ধরনের আইনি পরামর্শ এবং বিরোধ নিষ্পত্তির সহজ পদ্ধতি ও বিকল্প পদ্ধতির জন্য সরকারি আইনি সহায়তা পাওয় যায়।

এছাড়া কিছু সুনিদষ্টি ক্ষেত্রে সরকারি আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়ঃ

স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে স্বামীর বিয়ে

শারীরিক নির্যাতন

যৌতুক দাবী বা যৌতুকের জন্য নির্যাতন

এসিড নিক্ষেপ

পাচার

অপহরণ

ধর্ষণ

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক আটক বা গ্রেফতার।

সন্তানের অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও দেনমোহর আদায়

বিবাহ বিচ্ছেদ

সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার

দলিল বাতিল

স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

সম্পত্তি বন্টন বা বাটোয়ারা

ঘোষণামূলক মামলা

চুক্তি সংক্রান্ত মামলা ইত্যাদি।

কে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির অধিকারী হবেন

কে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির অধিকারী হবেন

নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণ আইন সহায়তা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেনঃ-

(ক) কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক ৭৫,০০০ টাকার উর্ধ্বে আয় করতে অক্ষম মুক্তিযোদ্ধা;

(খ) বয়স্ক ভাতা পাইতেছেন এমন কোন ব্যক্তি

(গ) ভি জি ডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা;

(ঘ) পাচারের শিকার নারী বা শিশু;

(ঙ) দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু;

(চ) আর্দশ গ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ প্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি

(ছ) অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুঃস্থ মহিলা;

(জ) উর্পাজনে অক্ষম এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধী;

(ঝ) আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি

(ঞ) বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সর্মথন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল;

(ট) আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলিয়া বিবেচিত ব্যক্তি

(ঠ) জলে কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলিয়া সুপারশিকৃত বা বিবেচিত কোনো ব্যক্তি

(ড) আর্থিকভাবে অসচ্চল,সহায় সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ যিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্বীয় অধিকার প্রতষ্ঠিার জন্য মামলা পরিচালনায় অসমর্থ;

এক্ষেত্রে ”অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি” অর্থে এমন ব্যক্তিকে বুঝাবে যার বার্ষিক গড় আয় ৫০,০০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকার উর্ধ্বে নয়।

Bangladesh-supreme-court-morningsunbdজেনে নেই সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তি সম্পর্কিত তথ্যসমহ

জেনে নেই সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তি সম্পর্কিত তথ্যসমহ

আইনগত সহায়তা

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সমানভাবে আইনের আশ্রয় পাবার অধিকারী। কিন্তু প্রকৃতভাবে দেখা যায় দরিদ্র নাগরিকেরা অর্থের অভাবে আইনজীবি নিয়োগ দিতে পারেন না এবং আদালতের কাছে বিচার চাওয়া্র মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিচার পাবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তি সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত এবং ২০০০ সালে Canadian International Development Agency (CIDA)’র  সহযোগিতায় সরকার দরিদ্র বিচারপ্রার্থীর জন্য আইনগত সহায়তা প্রদানের উদ্দশ্যে “আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০” পাশ করে। পরবর্তিতে সরকার ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট এ আইন সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ অধিকতর সংশোধন করে আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) আইন ২০১৩ পাস করে।

তথ্য জানি দুর্নীতি প্রতিরোধ করি

তথ্য হল শক্তি যে শক্তির অভাবে আমরা আমাদের পাওনা অধিকার সমূহ হতে প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছি। যেকোন রাষ্ট্র বা সমাজের মানুষ পিছিয়ে পরে শুধুমাত্র তথ্য না জানার কারনে। তথ্য জানার অধিকার মানুষের বেচে থাকার অধিকার। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯, বাংলাদেশের জন্য একটি যুগাšতকারী আইন, রাষ্ট্রের উপর জনগণের কতৃর্ত্ব স্থাপনে জনতার হাতিয়ার।

এই আইনের মাধ্যমে জনগণ সারাদেশের স্থানীয় অফিস থেকে শুরু করে মহামান্য
রাষ্ট্রপতির অফিস পর্যšত সব সরকারি অফিস থেকে নানাবিধ তথ্য চাইতে পারে, যা আগে ভাবায় যেত না! এই আইন হচ্ছে জনগণের নিজের অধিকার আদায়ের হাতিয়ার, এর সঠিক প্রয়োগ দেশকে করতে পারে স্বচ্ছ, সত্যিকারের গনতান্ত্রীক ও দুর্নীতিমুক্ত।
তথ্য বলতে কি বোঝায়? এই আইনের মতে তথ্য বলতে বোঝায়, সরকারী এবং সরকারী বা বিদেশী অর্থে পরিচালিত বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানের গঠন প্রণালী,ব্যবস্থাপনা কাঠামো,অফিসের কাজের সাথে সম্পৃক্ত কাগজপত্র, ফাইল, বই, নকশা, মানচিত্র, চুক্তি, তথ্য উপাত্ত, লগবই, আদেশ, দলিল, নমুনা, চিঠি, রিপোর্ট, খরচের হিসেব, প্রকল্প প্রস্থাব, ছবি, ফিল্ম ইত্যাদি। উদাহরণ সরূপ বলা যায়, আপনার এলাকার রাস্তা কবে তৈরী হবে বা মেরামত হবে সেই সম্পর্কে তথ্য, সরকারী হাসপাতাল, প্রতিষ্ঠান সমূহে কি কি সেবা আছে আপনার জন্য এই ধরনের তথ্য, গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ এর ভিজিএফ কার্ড, কাবিটা, কাবিখা কিভাবে পরিচালিত হয় তা জানতে পারেন এই আইনের মাধ্যমে আবেদন করে।
এই আইনের উদ্দেশ্য- জনগণ প্রজাতন্ত্রের মালিক ও জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। তাই এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে: রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা, সরকারি কাজে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি বন্ধ করা এবং সত্যিকার অর্থে দেশে সুশাসন আর গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। যে দেশের নাগরিক যত সচেতন তার অধিকার নিয়ে, সেই দেশে তত দুনীর্তি কম।
জনগণ কোন তথ্য কিভাবে পেতে পারে? জনগণ সরকারী কাজের সাথে জড়িত ও সরকারের কাছে আছে বা সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন সব তথ্যই চাইতে পারবে। এসব তথ্য জনগণ সরকারী ফাইল, দলিল, রেকর্ড ইত্যাদি দেখার মাধ্যমে অথবা সরেজমিনে পরীক্ষার মাধ্যমে পেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সরকারী কোন চিঠি কেউ দেখতে চাইলে, শুধুমাত্র সেই চিঠিয় তাকে দেখতে দিতে হবে। কোন সারসংক্ষেপ বা অন্য কোন আকারে দিলে চলবে না।
তথ্য পাওয়ার জন্য আপনাকে যা করতে হবে, কেউ কোন কতৃপক্ষের কাছ থেকে কোন তথ্য জানতে চাইলে তাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। ই-মেইলের মাধ্যমেও আবেদন করা যাবে। আপনার নাম ঠিকানা, যে তথ্য পেতে চান তার বর্ণনা, কিভাবে আপনি তথ্য গ্রহন করবেন, ফাইল দেখার মাধ্যমে, নাকি ফাইলের অনুলিপি নিয়ে তা জানাতে হবে। অফিস গুলোতে মুদ্রিত ফরম থাকার কথা আইনে বলা আছে, যদি পাওয়া না যায় তবে হাতে বা ই-মেইলে আবেদন করা যাবে। যে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠি আবেদন করতে পারবে। এই তথ্য পাওয়ার জন্য কোন মূল্য পরিশোধ করতে হয়না, তবে আপনি যদি সিডি বা এই ধরনের কোন কিছুতে তথ্য নিতে যান তবে তার দাম আপনাকে দিতে হবে। আবেদন করার ২০ দিনের মাধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনাকে তথ্য দিতে বাধ্য থাকবেন, তবে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা যদি অন্য কোন উইনিট বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয় তবে এই সময় ৩০ দিন হয়ে যাবে।
তথ্য কমিশন- তথ্য আইন ঠিক ভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য রয়েছে তথ্য কমিশন। এই কাজ পর্যবেক্ষন আর আইন প্রয়েগে অসাম›জস্যতা দুর করা কমিশনের কাজ। সেই সাথে অভিযোগ শোনা, তথ্য দিতে অপরাগতার জন্য শাস্তির বিধান করা।
কিছু কথা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, জীবিকা, কৃষি, রাব্রীজ তৈরী বা মেরামত ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে জনগণ সরকারের কাছ থেকে এই ধরনের সঠিক তথ্য আদায় করতে পারলে অনেক কিছুই পরির্বতন হয়ে যাবে। দুর্নীতি কমে যাবে এবং সরকারী কাজে আসবে স্বচ্ছতা, সততা। তাই আমাদেরকে এই আইনের ব্যবহার করতে হবে নিজেদের অধিকার আদায় করতে। এটাই একমাত্র আইন যেখানে জনগণ সরাসরি সরকারকে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে পারে।
পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রই চায় না, তথ্য জনগণ জেনে যাক, সরকারি আমলা ও প্রতিষ্ঠনের খারাপ কাজ বা অসৎ, বা দুর্নীতি বন্ধ করে দিতে পারে এই আইনের সঠিক প্রয়োগ। এইসব দুর করার জন্য জনগণের অস্ত্র হচ্ছে এই তথ্য অধিকার আইন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই আইনের ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থায় আমূল পরির্বতন সাধিত হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে একদল তরূণ সমাজ তৈরী হয়েছে যাদের কাজ শুধু সরকারের বিভিন্ন কাজের তথ্য জানা এবং জনগণকে জানানো, যাতে সরকার জনগণের সাথে কোন চালাকি না করতে পারে সচ্ছ থাকে সব। সত্যিকারের গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য তথ্যই একমাত্র অবলম্বন।

আইনে অশ্লীলতা ও মূল্যবোধ

আমাদের দেশের অধিকাংশ আইন এসেছে ব্রিটিশ আইন থেকে। অশ্লীলতার আইন তার ব্যতিক্রম নয়। ১৭১৭ সালের আগে ইংল্যাণ্ডে অশ্লীলতার বিচার হত ধর্মীয় আদালতে। কোন বই অশ্লীল সেটি ঠিক করতো ইংল্যাণ্ডের চার্চ কিন্তু ১৭১৭ সাল থেকে স্থির হয় অশ্লীলতার বিচার হবে সাধারণ আদালতে। ১৮৬৮ সালে হিকলিনস মামলায় অশ্লীলতার যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, মোটামুটি ভাবে তারই উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে অশ্লীলতা আইনগুলি রচিত। অশ্লীলতা বলতে আমরা কি বুঝি,

শ্লীলতা অশ্লীলতা অনেকটাই ব্যক্তি-নির্ভর। একজনের কাছে যা অশ্লীল, আরেকজনের কাছে তা নাও হতে পারে। আইন অনুযায়ী এর সঠিক সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। কামপ্রবৃত্তিকে আকৃষ্ট করে, অথবা যার
ফল, যদি সামগ্রিক ভাবে বিচার করা যায়, লোকের মনকে কলুষিত ও নৈতিক ভাবে অধঃপাতিত করতে পারে সেটি হবে দণ্ডনীয় অপরাধ।বাংলা একাডেমির অভিধান থেকে অশ্লীলতার সংজ্ঞায় বলা হয়, কুৎসিত, জগন্য, কুরুচিপূর্ণ কোন কিছু। বাংলাদেশ পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ধারা ২৯২ এ বলা হয়েছে, কোন অশ্লীল বই, পুস্তিকা, কাগজ, অঙ্কন, ছবি, মূর্তি বা অন্য কোনো অশ্লীল জিনিস বিক্রি, ভাড়া দেওয়া, প্রদর্শন বা বিতরণ করার উদ্দেশ্যে বানানো; অথবা উপরোক্ত অশ্লীল জিনিসগুলি বিক্রি, ভাড়া দেওয়া, বিতরণ বা প্রদর্শন করা, অথবা সেগুলি নিজের কাছে রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। উপরোক্ত যে কোনো উদ্দেশ্যে কোনো অশ্লীল বস্তু আমদানী বা রপ্তানী করা; নিজের সে উদ্দেশ্য না থাকলেও সেই উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হতে পারে যদি জানা থাকে সেটাও দণ্ডনীয় অপরাধ। নিজের জ্ঞাতসারে অশ্লীল বস্তু সংক্রান্ত ব্যবসায় অংশ নিলে বা সেই ব্যবসার লভ্যাংশ গ্রহণ করলে সেটিও হবে দণ্ডনীয়।এই ধারা অনুসারে অবৈধ কোনো কাজে যুক্ত লোকের খবর কাউকে জানালে বা তার জন্য বিজ্ঞাপন দিলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে আইনে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন, প্রকৃতই ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বা ব্যবহৃত কোন পুস্তক বা লেখা বা চিত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। সাধারণ ভাবে বলতে পারি, যা মনকে দূষিত করে তা অশ্লীল। বিতর্কিত পুস্তক বা প্রকাশ যাদের হাতে পড়ার কথা তারা যদি এমন বয়সের বা অবস্থায় হয় যে, তাদের মন উত্তেজনাকর কোন কিছুর প্রভাবে হঠাৎ আকৃষ্ট হয় এবং উক্ত পুস্তক বা প্রকাশনার মধ্যে যদি এমন কিছু থাকে যা উক্ত মনগুলিকে নিচের দিকে টানে বা দূষিত করে তোলে, তবে তা অশ্লীল বলে গণ্য হবে। বাংলাদেশ দন্ডবিধি,১৮৬০ এর ধারা ২৯২, ২৯৩, ২৯৪ অনুযায়ী অশ্লীল পুস্তক, চিত্রকর্ম বিক্রয় তথা, অল্প বয়স্ক ব্যক্তির নিকট বিক্রয় সহ অশ্লীল গান ও কার্য্য দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে আমাদের দেশে। তবে গানে অশ্লীলতা হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য স¤পূর্ণ গানটি বিবেচনায় আনতে হবে। একই সাথে দন্ডবিধির ৫০৯ ধারায় বলা আছে, কোন নারীর শালীনতার অমর্যাদার অভিপ্রায়ে কোন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি বা কাজ দন্ডনীয় অপরাধ। যাকে আমরা ইভটিজিং বলে থাকি। অশ্লীলতা নতুন ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যম বা সাইবার স্পেসে। বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে পাশে করেছে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন। আইসিটি আইন, ২০০৬ ধারা ৫৭(১,২)অনুযায়ী ‘ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অশ্লিল বা নোংড়া কোন কিছু প্রকাশ বা সংযুক্তি করলে, যার মাধ্যমে কোন ধর্মীয় অনুভুতি ও সমাজে আঘাত করে বা কোন ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের ঝোঁক পাকায় বা দুর্নীতির স্বীকার হয় সেই প্রকাশনি দেখানো, শোনানো বা পড়ানোর মাধ্যমে যা অপরাধ বলে গণ্য হবে। যার সবোর্চ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদন্ড ও ১ কোটি টাকা জরিমানা। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে শ্লীল-অশ্লীল তারতম্য হয়। তারতম্য বা শ্রেণিভাগ যাই থাক অশ্লীলতার সামাজিক ক্ষতি নিয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই। অশ্লীলতা বলতে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বাণিজ্যিক উদ্দেশে তৈরি অশ্লীল সংলাপ, প্রকাশনা, নৃত্য, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন চলচিত্র বা ভিডিওচিত্র বা স্থিরচিত্রকে চিহ্নিত করেছেন। সেই অনুযায়ী পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ করা হয়েছে। যদিও উক্ত আইনে অশ্লীলতার সংজ্ঞা দেয়া হয় নি তবে বলা হয়েছে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কাটুর্ন বা লিফলেট; বিতরণ অপরাধ যা অশ্লীলতার নামান্তর। কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করিলে উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। নৈতিক শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে সমাজ থেকে নোংড়া সব কিছু নিমূল করা উচিত এবং এর জন্য, সিনেমা বা টিভি পর্দায় অশ্লীলতা রোধে সরকার সিনেমাটোগ্রাফী আইনের কথা ভাবতে পারে। তবে সব কিছুর আগে বিদ্যমান আইনের সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। একের পর এক আইন করা হয়, কিন্তু তা শুধু মৃত আইনের পাল্লা ভারী করে চলছে। বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ পারে এই সামাজিক নৈতিক অবক্ষয় রোধে অবদান রাখতে। আমাদের দেশে নারীকে পণ্য হিসেবে অনেক বিজ্ঞাপন ও মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। যাতে নারী-পুরষের সমতা , নারীদের নিজ হাতে লুন্ঠিত ও তাদের অশ্লীল ভাবে উপস্থাপন করা হয়। তা রোধে করা যেতে পারে নারীর অশোভন উপস্থাপন (নিরোধ) আইন। সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা পারে এই ধরনের সামাজিক অপরাধ তথা অন্যায় থেকে দুরে রাখতে। কারণ এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তরুণ ও শিশুরা।

কেন আইন জানবেন?

না জানাটাই আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। যেখানে জানার সুযোগ রয়েছে সেখানে বেঁচে থাকতে হলে জানতে হবে আইন।  অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষা মৌলিক চাহিদা। আর সেইসব মৌলিক চাহিদা পূরনে সচেতনভাবে শিক্ষা আহরণ করা কতর্ব্য। সেই শিক্ষার একটি অংশ আইন শিক্ষা যা পেলে আপনি অন্যসব অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করতে পারবেন সচেতনভাবে।

আইন জানা প্রতিটি নাগরিকের কতর্ব্য। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।

সেই দায়িত্ব পালন কল্পে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে দেশের বিদ্যমান আইন সম্পর্কে। তাই বলছি আইন জানুন সচেতন হওন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সুশাসন প্রয়োগে অংশীদার হওন।

আমরা এখানে চেষ্টা করব আইন জানাতে, বাকিটা আপনার দায়িত্ব।

তথ্য বলতে কি বোঝায়?

তথ্য বলতে কি বোঝায়?

তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী, তথ্য বলতে বোঝায়, সরকারী এবং সরকারী বা বিদেশী অর্থে পরিচালিত বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানের গঠন প্রণালী,ব্যবস্থাপনা কাঠামো,অফিসের কাজের সাথে সম্পৃক্ত কাগজপত্র, ফাইল, বই, নকশা, মানচিত্র, চুক্তি, তথ্য উপাত্ত, লগবই, আদেশ, দলিল, নমুনা, চিঠি, রিপোর্ট, খরচের হিসেব, প্রকল্প প্রস্থাব, ছবি, ফিল্ম ইত্যাদি।

download

উদাহরণ সরূপ বলা যায়, আপনার এলাকার রাস্তা কবে তৈরী হবে বা মেরামত হবে সেই সম্পর্কে তথ্য, সরকারী হাসপাতাল, প্রতিষ্ঠান সমূহে কি কি সেবা আছে আপনার জন্য এই ধরনের তথ্য, গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ এর ভিজিএফ কার্ড, কাবিটা, কাবিখা কিভাবে পরিচালিত হয় তা জানতে পারেন এই আইনের মাধ্যমে আবেদন করে।

মারামারি সম্পর্কে আইন কি বলে এবং এর শাস্তি কি?

দুই বা ততোধিক ব্যক্তি প্রকাশ্য স্থানে ঝগড়া করে গণশান্তি ভঙ্গ করলে তারা মারামারি করে বলে গণ্য হবে।

মারামারি অপরাধের মূল উপাদান হচ্ছে গণশান্তি নষ্ট করা। প্রকাশ্য স্থানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি হিংসাত্মক সংগ্রামে লিপ্ত হলেই তারা নি:সন্দেহে গণশান্তি বিঘ্নিত করে বা নষ্ট করে। এমতাবস্থায় জনসাধারণ মারামারির কারণে যে ভয় পেয়েছিলেন তা আলাদাভাবে প্রমাণ করা আবশ্যক হয় না।

মারামারির অপরাধ গঠনে ঝগড়া আবশ্যক বা বাধ্যতামুলক এবং ঝগড়া দ্বারা বুঝায় যে দুটি পক্ষের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রভুত্ব অর্জনের বা শ্রেষ্ঠত্ত অর্জনের প্রতিযোগিতা চলছে। উক্ত দুই পক্ষের মধ্যে হিংসাত্বক কর্মের হুমকি দেয়া না হলে কোন মারামারি হতে পারে না। কাজেই যেক্ষেত্রে একটি পক্ষ অগ্রগামী অথচ অপর পক্ষ নিষ্কর্ম বা নিরব থাকে সেই ক্ষেত্রে কোন মারামারি হতে পারে না।

মারামারি করার শাস্তি

যে ব্যক্তি মারামারি অনুষ্ঠান করে সেই ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে যার মেয়াদ ০১ মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদন্ডে যার পরিমাণ ১০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয়বিধ দন্ডিত হবে।

এখানে মারামারি অপরাধের শাস্তির বিধান করা হয়েছে। মারামারিকে আক্রমণ এবং দাঙ্গা হতে স্বতন্ত্র বা ভিন্ন হিসাবে দেখতে হবে। দাঙ্গায় পূর্ব পরিকল্পনা থাকে কিন্তু মারামারিতে তা নেই, এটি সাধারণত: হঠাৎ ঘটে থাকে।

দন্ডবিধির বিভিন্ন প্রকার শাস্তিযোগ্য ধারাসমূহ

জামিনযোগ্য অপরাধের ধারা সমূহ:

৩৩৪-৩৫২, ৩৫৪, ৩৫৫. ৩৫৭-৩৬৩, ৩৭০, ৩৭৪, ৩৮৪, ৩৮৮, ৩৮৯, ৪০৩, ৪০৪, ৪১৭-৪৩৫, ৪৪৭, ৪৪৮, ৪৫১, ৪৬১-৪৬৫, ৪৬৯-৪৭৫, ৪৭৭ক-৪৮৯, ৪৮৯গ, ৪৯১, ৪৯৪-৫০৪, ৪০৬-৫১০।

জামিন অযোগ্য অপরাধের ধারা সমূহ:
৩৫৩, ৩৫৬, ৩৬৪, ৩৬৪ক, ৩৬৫, ৩৬৬ক, ৩৬৬খ-৩৬৯, ৩৭১-৩৭৩, ৩৭৬-৩৮২, ৩৮৫-৩৮৭, ৩৯২-৪০২, ৪০৬-৪১৪, ৪৩৬-৪৪০, ৪৪৯, ৪৫০, ৪৫২-৪৬০, ৪৬৬-৪৬৮, ৪৮৯ক, ৪৮৯খ, ৪৮৯ঘ, ৪৯৩, ৫০৫, ৫০৫ক, ৫১১।

মৃত্যু দন্ডের ধারাসমূহ:
১২১, ১৩২, ১৯৪, ৩০২, ৩০৩, ৩০৫, ৩২৬-ক, ৩৬৪-ক, ৩৯৬ দন্ডবিধির মোট ৯টি ধারায় এবং আরো কয়েকটি বিশেষ আইনের ধারায়ও মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২, ইত্যািদি।

যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ধারাসমূহ:
১২১, ১২১-ক, ১২২, ১২৪-ক, ১২৫, ১২৮, ১৩০, ১৩২, ১৯৪, ১৯৫, ২২২, ২২৫ (মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ব্যক্তিকে আইনসঙ্গত হেফাজতে বাধা দিলে), ২৩২, ২৩৮, ২৫৫, ৩০২, ৩০৪, ৩০৫, ৩০৭, ৩১১, ৩১৩, ৩২৬, ৩২৬-ক, ৩২৯, ৩৬৪, ৩৬৪-ক,
৩৭১, ৩৭৬, ৩৭৭, ৩৮৭, ৩৮৮, ৩৮৯ (সম্পত্তি আদায়ের জন্য কারাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধে অভিযুক্ত করার অস্বাভাবিক ভয় দেখালে), ৩৯৪-৩৯৬, ৪০০, ৪০৯, ৪১২, ৪১৩, ৪৩৬, ৪৩৮, ৪৪৯, ৪৫৯, ৪৬০, ৪৬৭, ৪৭২, ৪৭৪, ৪৭৫, ৪৭৭, ৪৮৯-ক,
৪৮৯খ, ৪৮৯-ঘ, ধারা। এছাড়া বিশেষ কয়েকটি আইনের ধারায়ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।

শুধুমাত্র বিনাশ্রম কারাদন্ডের ধারাসমূহ
১৬৩, ১৬৬, ১৬৮, ১৬৯, ১৭২, ১৭৩, ১৭৪, ১৭৫, ১৭৬, ১৭৮, ১৭৯, ১৮০, ১৮৭, ১৮৮, ২২৩, ২২৫-ক(খ), ২২৮, ২৯১, ৩০৯, ৩৪১, ৩৫৮, ৫০৯, ৫১০

শুধুমাত্র জরিমানা দন্ডের ধারাসমূহ:
১৩৭, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬, ১৭১ছ, ১৭১জ, ১৭১ঝ, ২৬৩ক, ২৭৮, ২৮৩, ২৯০।