কে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির অধিকারী হবেন

কে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির অধিকারী হবেন

নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণ আইন সহায়তা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেনঃ-

(ক) কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক ৭৫,০০০ টাকার উর্ধ্বে আয় করতে অক্ষম মুক্তিযোদ্ধা;

(খ) বয়স্ক ভাতা পাইতেছেন এমন কোন ব্যক্তি

(গ) ভি জি ডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা;

(ঘ) পাচারের শিকার নারী বা শিশু;

(ঙ) দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু;

(চ) আর্দশ গ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ প্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি

(ছ) অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুঃস্থ মহিলা;

(জ) উর্পাজনে অক্ষম এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধী;

(ঝ) আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি

(ঞ) বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সর্মথন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল;

(ট) আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলিয়া বিবেচিত ব্যক্তি

(ঠ) জলে কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলিয়া সুপারশিকৃত বা বিবেচিত কোনো ব্যক্তি

(ড) আর্থিকভাবে অসচ্চল,সহায় সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ যিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্বীয় অধিকার প্রতষ্ঠিার জন্য মামলা পরিচালনায় অসমর্থ;

এক্ষেত্রে ”অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি” অর্থে এমন ব্যক্তিকে বুঝাবে যার বার্ষিক গড় আয় ৫০,০০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকার উর্ধ্বে নয়।

Bangladesh-supreme-court-morningsunbdজেনে নেই সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তি সম্পর্কিত তথ্যসমহ

জেনে নেই সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তি সম্পর্কিত তথ্যসমহ

আইনগত সহায়তা

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সমানভাবে আইনের আশ্রয় পাবার অধিকারী। কিন্তু প্রকৃতভাবে দেখা যায় দরিদ্র নাগরিকেরা অর্থের অভাবে আইনজীবি নিয়োগ দিতে পারেন না এবং আদালতের কাছে বিচার চাওয়া্র মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিচার পাবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তি সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত এবং ২০০০ সালে Canadian International Development Agency (CIDA)’র  সহযোগিতায় সরকার দরিদ্র বিচারপ্রার্থীর জন্য আইনগত সহায়তা প্রদানের উদ্দশ্যে “আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০” পাশ করে। পরবর্তিতে সরকার ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট এ আইন সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ অধিকতর সংশোধন করে আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) আইন ২০১৩ পাস করে।

কেন আইন জানবেন?

না জানাটাই আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। যেখানে জানার সুযোগ রয়েছে সেখানে বেঁচে থাকতে হলে জানতে হবে আইন।  অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষা মৌলিক চাহিদা। আর সেইসব মৌলিক চাহিদা পূরনে সচেতনভাবে শিক্ষা আহরণ করা কতর্ব্য। সেই শিক্ষার একটি অংশ আইন শিক্ষা যা পেলে আপনি অন্যসব অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করতে পারবেন সচেতনভাবে।

আইন জানা প্রতিটি নাগরিকের কতর্ব্য। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।

সেই দায়িত্ব পালন কল্পে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে দেশের বিদ্যমান আইন সম্পর্কে। তাই বলছি আইন জানুন সচেতন হওন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সুশাসন প্রয়োগে অংশীদার হওন।

আমরা এখানে চেষ্টা করব আইন জানাতে, বাকিটা আপনার দায়িত্ব।

মারামারি সম্পর্কে আইন কি বলে এবং এর শাস্তি কি?

দুই বা ততোধিক ব্যক্তি প্রকাশ্য স্থানে ঝগড়া করে গণশান্তি ভঙ্গ করলে তারা মারামারি করে বলে গণ্য হবে।

মারামারি অপরাধের মূল উপাদান হচ্ছে গণশান্তি নষ্ট করা। প্রকাশ্য স্থানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি হিংসাত্মক সংগ্রামে লিপ্ত হলেই তারা নি:সন্দেহে গণশান্তি বিঘ্নিত করে বা নষ্ট করে। এমতাবস্থায় জনসাধারণ মারামারির কারণে যে ভয় পেয়েছিলেন তা আলাদাভাবে প্রমাণ করা আবশ্যক হয় না।

মারামারির অপরাধ গঠনে ঝগড়া আবশ্যক বা বাধ্যতামুলক এবং ঝগড়া দ্বারা বুঝায় যে দুটি পক্ষের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রভুত্ব অর্জনের বা শ্রেষ্ঠত্ত অর্জনের প্রতিযোগিতা চলছে। উক্ত দুই পক্ষের মধ্যে হিংসাত্বক কর্মের হুমকি দেয়া না হলে কোন মারামারি হতে পারে না। কাজেই যেক্ষেত্রে একটি পক্ষ অগ্রগামী অথচ অপর পক্ষ নিষ্কর্ম বা নিরব থাকে সেই ক্ষেত্রে কোন মারামারি হতে পারে না।

মারামারি করার শাস্তি

যে ব্যক্তি মারামারি অনুষ্ঠান করে সেই ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে যার মেয়াদ ০১ মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদন্ডে যার পরিমাণ ১০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয়বিধ দন্ডিত হবে।

এখানে মারামারি অপরাধের শাস্তির বিধান করা হয়েছে। মারামারিকে আক্রমণ এবং দাঙ্গা হতে স্বতন্ত্র বা ভিন্ন হিসাবে দেখতে হবে। দাঙ্গায় পূর্ব পরিকল্পনা থাকে কিন্তু মারামারিতে তা নেই, এটি সাধারণত: হঠাৎ ঘটে থাকে।

দন্ডবিধির বিভিন্ন প্রকার শাস্তিযোগ্য ধারাসমূহ

জামিনযোগ্য অপরাধের ধারা সমূহ:

৩৩৪-৩৫২, ৩৫৪, ৩৫৫. ৩৫৭-৩৬৩, ৩৭০, ৩৭৪, ৩৮৪, ৩৮৮, ৩৮৯, ৪০৩, ৪০৪, ৪১৭-৪৩৫, ৪৪৭, ৪৪৮, ৪৫১, ৪৬১-৪৬৫, ৪৬৯-৪৭৫, ৪৭৭ক-৪৮৯, ৪৮৯গ, ৪৯১, ৪৯৪-৫০৪, ৪০৬-৫১০।

জামিন অযোগ্য অপরাধের ধারা সমূহ:
৩৫৩, ৩৫৬, ৩৬৪, ৩৬৪ক, ৩৬৫, ৩৬৬ক, ৩৬৬খ-৩৬৯, ৩৭১-৩৭৩, ৩৭৬-৩৮২, ৩৮৫-৩৮৭, ৩৯২-৪০২, ৪০৬-৪১৪, ৪৩৬-৪৪০, ৪৪৯, ৪৫০, ৪৫২-৪৬০, ৪৬৬-৪৬৮, ৪৮৯ক, ৪৮৯খ, ৪৮৯ঘ, ৪৯৩, ৫০৫, ৫০৫ক, ৫১১।

মৃত্যু দন্ডের ধারাসমূহ:
১২১, ১৩২, ১৯৪, ৩০২, ৩০৩, ৩০৫, ৩২৬-ক, ৩৬৪-ক, ৩৯৬ দন্ডবিধির মোট ৯টি ধারায় এবং আরো কয়েকটি বিশেষ আইনের ধারায়ও মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২, ইত্যািদি।

যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ধারাসমূহ:
১২১, ১২১-ক, ১২২, ১২৪-ক, ১২৫, ১২৮, ১৩০, ১৩২, ১৯৪, ১৯৫, ২২২, ২২৫ (মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ব্যক্তিকে আইনসঙ্গত হেফাজতে বাধা দিলে), ২৩২, ২৩৮, ২৫৫, ৩০২, ৩০৪, ৩০৫, ৩০৭, ৩১১, ৩১৩, ৩২৬, ৩২৬-ক, ৩২৯, ৩৬৪, ৩৬৪-ক,
৩৭১, ৩৭৬, ৩৭৭, ৩৮৭, ৩৮৮, ৩৮৯ (সম্পত্তি আদায়ের জন্য কারাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধে অভিযুক্ত করার অস্বাভাবিক ভয় দেখালে), ৩৯৪-৩৯৬, ৪০০, ৪০৯, ৪১২, ৪১৩, ৪৩৬, ৪৩৮, ৪৪৯, ৪৫৯, ৪৬০, ৪৬৭, ৪৭২, ৪৭৪, ৪৭৫, ৪৭৭, ৪৮৯-ক,
৪৮৯খ, ৪৮৯-ঘ, ধারা। এছাড়া বিশেষ কয়েকটি আইনের ধারায়ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।

শুধুমাত্র বিনাশ্রম কারাদন্ডের ধারাসমূহ
১৬৩, ১৬৬, ১৬৮, ১৬৯, ১৭২, ১৭৩, ১৭৪, ১৭৫, ১৭৬, ১৭৮, ১৭৯, ১৮০, ১৮৭, ১৮৮, ২২৩, ২২৫-ক(খ), ২২৮, ২৯১, ৩০৯, ৩৪১, ৩৫৮, ৫০৯, ৫১০

শুধুমাত্র জরিমানা দন্ডের ধারাসমূহ:
১৩৭, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬, ১৭১ছ, ১৭১জ, ১৭১ঝ, ২৬৩ক, ২৭৮, ২৮৩, ২৯০।

হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেবার পরিনাম কি হতে পারে?

যদি কোন ব্যক্তি কারো ক্ষতি করবার উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিনা কারণে বা আইনগত কোন কারণ না থাকার পরও অপরাধ সংগঠিত করেছে বলে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে ফৌজদারী মামলা বা অভিযোগ দায়ের করে বা কারো মাধ্যমে করায় তাহলে সেই ব্যক্তি আইনত অপরাধী হিসাবে গণ্য হবে।

যার শাস্তি- — সর্বোচ্চ ০২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।

আর যদি মামলাটি মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয়, যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় বা ০৭ বছর বা তার বেশী মেয়াদের শাস্তি হতে পারে এমন হয় তাহলে তার শাস্তি- —– সর্বোচ্চ ০৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডে এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে।

ধারা- ২১১, দন্ডবিধি- ১৮৬০।

বিক্রয়ের বায়না চুক্তি, দান দলিল ও বন্ধক দলিল রেজিস্ট্রি ফি

রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এ নতুন সংযোজিত ৭৮এ ধারা অনুসারে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির বায়না চুক্তি, দান দলিল ও বন্ধক দলিল রেজিস্ট্রি ফি হবে নিমড়বরূপঃ

(এ) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির বায়না চুক্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফি হবেঃ
(i) সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়না/চুক্তিপত্রের জন্য ষ্ট্যাম্প শুল্ক মাত্র ১৫০ টাকা।
(ii) বিক্রয়তব্য সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশী না হলে ফি ৫০০ টাকা। (iii) সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি কিন্তু পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশী না হলে ফি ১০০০ টাকা।
(iv) সম্পত্তির মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশী হলে ফি ২০০০ টাকা।

(বি) দান দলিল রেজিস্ট্রি ফিঃ

মুসলিম পারসোনাল ল’ (শরীয়ত) অনুসারে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনী, সহোদর ভাই-ভাই, সহোদর বোন-বোন এবং সহোদর ভাই ও সহোদর বোনের মধ্যে যে কোনো স্থাবর সম্পত্তির দান দলিল বা দান চুক্তি রেজিস্ট্রি ফি মাত্র ১০০ টাকা।

(সি) বন্ধক (Mortgage)চুক্তি রেজিস্ট্রি ফিঃ

সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ৫৯ ধারার বিধান অনুসারে-

(i) বন্ধবী অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে না হলে ফি বন্ধকী অর্থের ১% তবে ২০০ টাকার নিমেড়ব নয় এবং ৫০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।
(ii) বন্ধকী অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ টাকার উপরে কিন্তু বিশ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে না হলে ফি বন্ধকী অর্থের ০.২৫% (শূন্য দশমিক এক শূন্য শতাংশ) টাকা হারে তবে ৩০০০ টাকার কম নয় এবং ৫,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।
(iii) বন্ধকী অর্থের পরিমাণ বিশ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হরে সে চুক্তি রেজিস্ট্রি ফি লাগবে বন্ধকী অর্থের ০.১০% (শূন্য দশমিক এক শূন্য শতাংশ) টাকা হারে তবে ৩০০০ টাকার কম নয় এবং ৫,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।

হত্যা চেষ্টা মামলা

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা চেষ্টা মামলায় মুফতি হান্নানসহ ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় _75732902_hi022717812প্রকাশ।